বাংলাদেশ এবং ভারতে পিঠা থেকে শুরু করে প্রায় সকল প্রকার মিষ্টি খাদ্য তে গুড় ব্যবহার করা হয়।গুড়ের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা। গুড় আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শীতকালে গুড় শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আমাদের দেশে সচরাচল তিন ধরনের গুড় পাওয়া যায় আখের গুড়,তালের গুড় ও খেজুরের গুড় । গুড়ে রয়েছে একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং অপকারিতা তো চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। আখের গুড়ের প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি এবং শর্করা রয়েছে। তাই ডারিয়া রোগীকে আখের গুড়ের স্যালাইন খাওয়ানো হয়। কারণ আখের গুড়ে থাকা শর্করা শরীরের পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। আখের গুঁড়ে ক্যালরি বেশি থাকার কারণে এটি দ্রুত ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক গুড়ের ক্ষতিকর দিকঃপ্রতি ১০০ গ্রাম গুড়ে ৩৮৫ ক্যালোরি রয়েছে, তাই যারা ওজন কমানোর চেষ্টায় আছে তাদের জন্য গুড় না খাওয়াই ভালো। সামান্য পরিমাণে খেলে কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে গুড় খেলে তা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। গুড়ে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত ওজনধারীদের অসুবিধার কারণ হতে পারে। তাই গুড়ে যতই পুষ্টিগুণ থাক না কেন অতিরিক্ত ওজনধারীদের বিকল্প পথ বেছে নিতে হবে।
রক্তে বাড়াতে পারে শর্করাঃচিনির তুলনায় স্বাস্থ্যকর হলেও গুড় যেহেতু মিষ্টি , তাই এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে রক্ত শর্করার মাত্রা বাড়বেই। প্রতি ১০ গ্রাম গুড়ে ৯.৭ গ্রাম চিনি থাকে।
জীবাণু সংক্রমণঃগুড় তৈরি করার পদ্ধতি তো ভুল হলে কিংবা স্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি না করা হলে সেই গুড় থেকে জীবাণু সংক্রমনের সম্ভাবনা থাকে।গুড় সাধারণত গ্রামে তৈরি হয় যেখানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা হয় না। তবে এই জীবাণু সংক্রমণ থেকে স্বাস্থ্য হানি অথবা শারীরিক জটিলতাও দেখা দিতে পারে, আবার নাও পারে।
আরো পড়ুন ঃকাঁচা আমের জুসের উপকারিতা
আখ ও খেজুরের রস দিয়ে আমাদের দেশে গুড় তৈরি করা হয়। প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি করার গুড়ের উপকারিতা সাধারণ চিনির থেকে অনেক বেশি। আখের গুড়ে অধিক পরিমাণে ক্যালরি ও শর্করা থাকে, সেই সঙ্গে থাকে প্রয়োজনীয় খনিজ। আজকাল প্রায় প্রতিটা ঘরেই ডায়াবেটিসের সমস্যা আর সেই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে বিশেষজ্ঞরা চিনি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলে। বিশেষজ্ঞরা চিনির পরিবর্তে গুড় খেতে বলে থাকে। যারা ভয় পান আখের গুড় খেলে সুগার লেভেল বৃদ্ধি পায় কিনা। তারা তালের গুড় খেতে পারেন।
তীব্র গরমে মানুষ নিজেকে শীতল রাখতে অনেক কিছুই করে থাকে। নিজের শরীরকে শীতল রাখতে অনেকেই নানান ধরনের ফলমূল খেয়ে থাকে যেমনঃ-শসা,তরমুজ ও ডাবের পানি। তবে এই গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে গুড়ের শরবত হতে পারে খুবই কার্যকরী একটি উপায়। গুড় সাধারণত বিভিন্ন অসুখ থেকে রক্ষা করতেও শক্তি যোগায়।নিয়মিত গুড় খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। নিয়মিত গুড় খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
তালের গুড় খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে ।তালের গুড় ফলিক এসিড সমৃদ্ধ একটি খাদ্য। প্রতি ১০ গ্রাম তালের গুড়ে রয়েছে ১৬ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, যে কারণে যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের নিয়মিত তালের গুড় খাওয়া উচিত। তালের গুড় লিভারের কোষ গুলোকে শক্তিশালী করে তোলে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন চিনির চেয়ে গুড় খাওয়া অনেক স্বাস্থ্যকর। অন্যান্য গুড়ের চেয়ে খেজুরের গুড়ের পুষ্টি অনেক বেশিই বলা যায়। খেজুরের গুড়ে আছে ফসফরাস,ম্যাগনেসিয়াম,আয়রন ও পটাশিয়াম জাতীয় খনিজ পদার্থ। খেজুরের গুড় ওজন কমাতে সহায়তা করে।
যাদের হজমের সমস্যা আছে, তারা ডেইলি এক চামচ খেজুরের গুড় খেয়ে ডায়েট করতে পারেন।
খেজুরের গুড় আপনাকে কোল্ড এলার্জি থেকে অনেকটাই দূরে রাখে।রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়াতে সাহায্য করে এই গুড়।আয়রন,কার্বোহাইড্রেট অথবা ঘাটতি হলেও খেজুরের গুড় শরীরকে ভালো রাখে। গুড়ে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনি সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও কাজে লাগাতে পারেন। এই গুড় ত্বক সতেজ রাখে পাশপাশি ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমায়। শীতে শরীর গরম রাখতে অথবা সর্দি-কাশি ও জ্বরের মতো রোগ থেকেও নিজেকে দূরে রাখতে খেতে পারেন খেজুরের গুড়।
তবে খেয়াল রাখবেন,শুধু খাঁটি গুড় থেকেই এসব উপকারিতা পাবেন আপনি।ভেজাল গুড় খেলে শরীরে উপকারিতার চেয়ে অপকারিতাই বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
খেজুরের গুড় অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার হলেও এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তবে বলা যায় খেজুরের গুড়ের অপকারিতার চেয়ে উপকারিতায় বেশি।নিয়মিত সঠিক পরিমাণে খেজুরের গুড় খেলে তা শরীরের কোন ক্ষতি করে না।তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেজুরের গুড় খেলে সমস্যায় পড়তে পারেন আপনি।
খেজুরের গুড়ে অধিক পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে। খেজুরের গুড়ে আয়রন,পটাসিয়াম,ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় খনিজ পদার্থ রয়েছে।পুষ্টিবিদদের মতে চিনির চেয়ে যেকোনো গুড় খাওয়া অনেক স্বাস্থ্যকর।
আজকের এই আর্টিকেল দ্বারা আপনার জানা-অজানা কিছু তথ্য দিয়েছে এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি পরিচিতদের কাছে শেয়ার করতে ভুলবেন না ধন্যবাদ।
এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন