তীব্র গরমে তালের শাঁসের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

গ্রীষ্মের অন্যতম উপকারী একটি ফল হল কাঁচা তাল অর্থাৎ তালের শাঁস। কাঁচা তালের শাঁস এশিয়ার দেশগুলোতে খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার হিসেবে পরিচিত। তালের শাঁস খেতে অনেকটা নারকেলের মতই।


এটি শুধুমাত্র সুস্বাদু নয় এটি অবিশ্বাস্যভাবে পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা সমৃদ্ধ। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক তীব্র গরমে তালের শাঁসের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে-

তালের শাঁসের পুষ্টিগুণ

প্রতি ১০০ গ্রাম তালের শাঁসে রয়েছে ৮৭ কিলো ক্যালরি,৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম,৮ গ্রাম আমিষ,জলীয় অংশ ৮৭.৬ গ্রাম,ফ্যাট ১ গ্রাম,কার্বোহাইড্রেট ১০.৯ গ্রাম,খাদ্য আঁশ ১ গ্রাম,ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম,ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম,লৌহ ১ মিলিগ্রাম,থায়ামিন ০.৪ গ্রাম,রিবোফাভিন ০.২ মিলিগ্রাম,নিয়াসিন ৩ মিলিগ্রাম,ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম। এই উপাদানগুলো শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে এবং অসুস্থতা প্রতিরোধ করে।

তালের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা

গরমের কারণে আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। তালের শাঁস শরীরকে ঠান্ডা করে এবং শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করে শরীরকে ডিহাইড্রেটেড রাখতে সহায়তা করে। গরমে পানি শূন্যতার কারণে চুলকানি বা এলার্জি জাতীয় সমস্যা হতে পারে। গরমে খাবারের তালিকায় তালের শাঁস রাখলে এই সমস্যা কমবে।

তালের শাঁসে রয়েছে সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম যা শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। এতে গরমের ক্লান্তি দূর হয় এবং শরীর সতেজ থাকে।

গরমের কারণে শরীরে রোদে পোড়া দাগ হয়ে যায় এবং ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তালের শাঁসের উপাদান গুলি এই সমস্যা প্রতিরোধ করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গরমে শরীর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। তালের শাঁস খেলে এইসব রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

তালশাঁস লো-ক্যালরির একটি খাবার। পেটের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে এই ফল। তালশাঁসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে এবং এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এটি পেটের বিভিন্ন সমস্যা নিরাময়েও কার্যকরী। এটি পানি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ থাকায় পেট ভরিয়ে রাখে এবং ক্ষুধাভাব কমায়।সুতরাং,এটি ওজন কমাতে সহায়তা করে।

তালশাঁস খেলে মুখের অরুচি স্বাদ এবং বমি বমি ভাব থেকে মুক্তি দেয়।তালশাঁসে উপস্থিত ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস দাঁত এবং হাড়ের গঠন মজবুত করে এবং চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চোখের অ্যালার্জি,পানি পড়া ইত্যাদি প্রতিরোধে ভুমিকা রাখে।

পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকায় তালশাঁস রক্তস্বল্পতা নিরাময় করতে পারে।এটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।তালশাঁস খেলে শরীরে নাইট্রেটের পরিমান বেড়ে যায় এবং স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।তালশাঁস লিভারের সুরক্ষা করে। এটি লিভার থেকে ক্ষতিকারক এবং পরিবেশগতভাবে ক্ষতিকারক পদার্থ অপসারণে সহায়তা করে। তালশাঁস খেলে স্মৃতিশক্তি ও দৃষ্টি শক্তির উন্নতি হয়। এটি চুল পড়া রোধ করতে এবং চুলের মসৃণতা উন্নত করতেও সহায়তা করে।

তালের শাঁস তীব্র গরমে শরীরের বাড়তি পানির চাহিদা মেটাতে সহায়তা করে। তাই পানির পাশাপাশি রসালো খাবার ও মিষ্টির ফল গ্রীষ্মের গরমে খুবই উপকারী। কচি তালে থাকে জেলাটিন, যা খাওয়ার পর পেট ভরা ভরা অনুভূতি দেয় এবং ক্ষুধা ভাব কমিয়ে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

কচি তালের শাঁসে রয়েছে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম যা শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে,যার কারণে গরমের ক্লান্ত দূর হয়। বমি ভাব বা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য এটি বেশ উপকারে একটি খাবার হতে পারে।তালের শাঁসে থাকা খাদ্য আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার সমাধান করতে সহায়তা করে। হজমের সমস্যা প্রতিরোধেও তালের শাঁস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখে।

তালের শাঁসে থাকা ক্যালসিয়াম হাঁড় গঠনে সহায়তা করে এবং দাঁতকে মজবুত এবং ভালো রাখে। এছাড়াও তালের শাঁস শরীরের কোষকে ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা করে।

এই ফলটি আয়রনের একটি উৎস। তাই নিয়মিত তালের শাঁস ছেলে দূর হয় অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতার মতো সমস্যা। এছাড়াও তাশাঁসে রয়েছে ভিটামিন এ যা আপনার আপনার দৃষ্টিশক্তিকে শক্তিশালী করে।এতে আরও রয়েছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।তালের শাঁস খেলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

লিভারের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এই ফল। এটি লিভার থেকে ক্ষতিকর এবং দূষিত পদার্থ বের করে দেয়। ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুল পড়া ইত্যাদি রোধ করতে তালশাঁস বেশ কার্যকরী।

  1. এই ফল শরীরে শক্তি যোগায় এবং দৈহিক তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। তাই শরীর ভিতর থেকে ঠান্ডা থাকে।
  2. শরীরকে আদ্র রাখতেও তালের শাঁস বেশ উপকারী তবে গরমে এই ফল বেশি খেলে পেট গরম হয়ে যেতে পারে। তাই এটি অল্প পরিমাণে খাওয়াই ভালো।
  3. এই ফলটি পেটের বিভিন্ন সমস্যা, জ্বর এবং পেটে জ্বালাপোড়া কমায়। এই ফল খেলে হজমের সমস্যাও দূর হয়।
  4. বর্তমানে অনিয়মিত জীবন যাপনের কারণে অনেকেই লিভারের সমস্যা ভুগছেন। আপনি কি জানেন তালের শাঁস লিভারের সুরক্ষায় কাজ করে।
  5. তীব্র গরমে হাত পায়ে চুলকানি অথবা এলার্জির সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। শরীরে পানির শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ার কারণে এমনটি হয়ে থাকে। এই সমস্যার সমাধান করে তালের শাঁস।

তালের শাঁস কখন পাওয়া যায়

তালশাঁস স্থানীয় গ্রীষ্মকালীন ফল গুলির মধ্যে একটি যা শুধুমাত্র বছরের অল্প সময়ের জন্য পাওয়া যায়। কাঁচা তালের মধ্যে থাকা সুস্বাদু এবং নরম জলীয় অংশ তালশাঁস নামেই সবার কাছে পরিচিত।তালশাঁস প্রাকৃতিকভাবে নরম, সামান্য নরম বা সামান্য একটু শক্ত হয়ে থাকে।কেউ নরম তালশাঁস খেতে পছন্দ করে আবার কেউ একটু শক্ত।

তালশাঁস খেলে কি ওজন বাড়ে

আপনি যদি গ্রীষ্মে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং ওজন বৃদ্ধির সমস্যায় ভুগে থাকেন,তাহলে টেনশন থেকে মুক্তি পেতে আপনার খাদ্যতালিকায় তালের শাঁস যোগ করুন।হ্যাঁ, তালের শাঁস শুধু আপনার শরীরকে ময়েশ্চারাইজ করে না এটি শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে। এর ইংরেজি নাম আইস অ্যাপল। এতে ভিটামিন বি, আয়রন, ড্রিঙ্ক, পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম এর মত অনেক গুণ রয়েছে যার আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। জেনে নিন তাল শাঁস খেলে কি ওজন বাড়ে-

তালের শাঁস ওজন কমাতে সহায়তা করে। এতে কেলানোর পরিমাণ কম থাকায় এবং পানির পরিমাণ বেশি থাকায় এটি মানুষের পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা রাখে। এই কারণেই অনেকেই এটিকে তাদের ওজন কমানোর খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। এই ফলটিতে উপস্থিত ফাইবার হজমের উন্নতি করে এবং সঠিক বিপাক বজায় রাখে।

শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে তালের শাঁসঃতালের শাঁসের শীতল প্রভাবের কারণে এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। গরমে অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে পানির অভাব হতে পারে। যার কারণে তোকে জ্বালাপোড়া ও পানি শূন্যতার সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। তালের শাঁস খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার সেরা একটি উপায় হতে পারে এটি।

গরমে তালের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা

আপনি যদি জানতে চান গরমে তালের শাঁস খাওয়ার ৫টি কার্যকরী উপকারিতা সম্পর্কে তাহলে আপনি সঠিক ওয়েবসাইটে এসেছেন আজকের এই পোস্টটিতে জানাবো গরমে তালের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক-

পেটের সমস্যায় উপকারী

তীব্র গরমে অনেকেই পেটের সমস্যায় ভোগেন। তালের শাঁস খেলে তাৎক্ষণিকভাবে পেট ঠান্ডা হয়। তালের শাঁস খেলে পরিপাকতন্ত্র শক্তিশালী হয়। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য, বদ হজম এবং এসিডিটির সমস্যা কমে।

বিপাকক্রিয়া বাড়ায়

দুর্বল বিপাকক্রিয়াযর কারণে ওজন বাড়তেই থাকে এবং মানুষ স্থূলতার শিকার হয়। অতিরিক্ত ফাইবার সমৃদ্ধ এই ফলটি খেলে ডিপ্রক্রিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এছাড়া এটি খেলে দীর্ঘক্ষন ক্ষুধা অনুভব হয় না। যার ফলে ওজন কমানোর প্রক্রিয়া সহজ হয়।

হাইড্রেটেড রাখে

তীব্র গরমে শরীর অতিরিক্ত গরম হতে থাকে। এতে শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়। এই অবস্থায় তালের শাঁস খেলে তাৎক্ষণিকভাবে শরীর হাইড্রেটেড হয়।ডিহাইড্রেশন থেকে নিজেকে বাঁচাতে এই ফলটি খেতে পারেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

দুর্বল ইমিউনিটি সিস্টেমের কারণে মানুষ খুব দ্রুত সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফলটি খান। 

ডায়াবেটিসে উপকারী

তালের শাঁস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও খুবই উপকারী।এতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুবই কম যার রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন