আনারস খুবই সুস্বাদু একটি মৌসুমী ফল। অনেকের কাছেই এটি প্রিয়, আবার অনেকেই এটি খেতে পছন্দ করেন না। তবে আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে জানলে হয়তো তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে। অনেকেই ভাবেন আনারস এবং দুধ একসঙ্গে খেলে বিষক্রিয়া হয়ে তিনি মারা যাবেন আসলে এটি একটি কুসংস্কার ছাড়া কিছুই না।
আনারস হলো একটি টক জাতীয় ফল বা অ্যাসিটিক ফল। দুধের মধ্যে যে কোন টক জাতীয় জিনিস মেশালে দুধ ফেটে ছানা হয়ে যেতে পারে। তাই দুধ এবং আনারস একসঙ্গে খেলে হতে পারে বদহজম, পেট ফাঁপা বা পেট খারাপের মতো অন্যান্য সমস্যা। তবে এতে কোন বিষক্রিয়ার ঝুঁকি নেই।
পুষ্টির অভাব পূরণ করতে আনারসের কোন জুড়ি নেই। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ফসফরাস।
আনারসে ব্রোমেলিন নামক এনজাইম থাকে যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তাই হজম জনিত যে কোন প্রকার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আনারস খেতে পারেন।
আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এটি ইমিউনিটি সিস্টেমের ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। ফলে ভাইরাস জনিত ঠান্ডা ও কাশি আপনার শরীরে বাসা বাঁধতে পারে না। জন্ডিস এবং জ্বর প্রতিরোধেও আনারস খুবই কার্যকরী।
গলা ব্যথা নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি রোগের ঔষুধের বিকল্প হিসেবে আনারস কাজ করে। আনারস রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে আনারস খেলে মুক্তি পাওয়া যায়। আনারসে কোন প্রকার ফ্যাট না থাকায় নিয়মিত পরিমাণমতো আনারসের জুস পান করলে ওজন কমে।
আমাদের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় আনারস। তাই শিরাধমনির মধ্য দিয়ে সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত চলাচল হয়। আনারসের থাকা ক্যালসিয়াম দাঁতের সুরক্ষায় কাজ করে। এছাড়াও আমাদের দাঁতের মাড়ির যে কোন প্রকারের সমস্যার সমাধানে আনারস বেশ কার্যকরী।
আনারস "ম্যাকুলার ডিগ্রেডেশন" প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে, এটি এমন একটি রোগ যা ধীরে ধীরে চোখের রেটে না নষ্ট করে মানুষকে অন্ধ করে দেয়। আনারস এই ভয়ংকর রোগটিকে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। আনারসে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন। প্রতিদিন পরিমাণ মতো আনারস খেলে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা ৩০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়।
আনারসে থাকা ক্যালরি আমাদের শরীরে শক্তি যোগান দেয়। আনারসে থাকা প্রোটিন ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বকে বলিরেখা তৈরি হওয়া প্রতিরোধ করে। দেহের তৈলাক্ত ত্বক এবং ব্রণ সহ ত্বকের নানান ধরনের সমস্যায় আনারস যথেষ্ট উপকারী।
আনারসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়ামও ও রয়েছে। ক্যালসিয়াম হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়া রোধ করতে সহায়তা করে। আনারসে থাকা ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে মজবুত করে তুলতে সহায়তা করে।
আপনারা উপরের আর্টিকেল থেকে জানতে পারলেন আনারস হওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক আনারস খাওয়ার ১০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক-
১। পুষ্টির অভাব পূরণ করেঃ
প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফলের নাম আনারস। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান। এইসব অপরিহার্য উপাদানগুলো আমাদের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২। হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ
আনারস আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। আনারসে ব্রোমেলিন নামক একটি এঞ্জাইম থাকে যা হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তাই বদহজম বা হজমজনিত যে কোন প্রকার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আনারস খেতে পারেন।
৩। কাশি এবং ভাইরাসজনিত ঠান্ডা প্রতিরোধ করতেঃ
আনারসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা ভাইরাস জনিত ঠান্ডা ও কাশি প্রতিরোধ করতে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও জ্বর ও জন্ডিস রোগ প্রতিরোধ আনারস খুবই উপকারী। এছাড়াও নাক দিয়ে পানি পড়া এবং গলা ব্যথার বিকল্প ওষুধ হিসেবে আনারসের জুস বানিয়ে খেতে পারেন।
৪।ওজন কমাতে সহায়তা করেঃ
আনারসে থাকে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার।এছাড়াও এতে কোন প্রকার ফ্যাট থেকে না পরিমাণ মতো অল্প পরিমাণে আনারস খেলে বা আনারসের জুস বানিয়ে জুস পান করলে তা শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করতে পারে।আপনি যদি দ্রুত ওজন কমাতে চান তাহলে আনারস খেতে পারেন।আনারস আমাদের দেহে রক্ত জমাত বাধতে দেয় না।তাই শিরা-উপশিরার মধ্যে দিয়ে সারা শরীরে শথিক ভাবে রক্ত প্রবাহিত বা রক্ত সঞ্চালন হয়।
৫।হাড়ের যেকোনো প্রকারের রোগ প্রতিরোধঃ
আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা হাড় গঠন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও আনারসে থাকা ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে করে তোলে শক্ত এবং মজবুত। তাই খাদ্য তালিকায় পরিমিত পরিমাণে আনারস রাখলে হাড়ের যে কোন প্রকারের রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আপনি যদি জানতে চান আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি নিশ্চয়ই কখনো না কখনো আনারস খেয়েছেন। অন্যান্য ফলের তুলনায় আনারসের স্বাদ কিছুটা আলাদা। অনেকেই আনারস খেতে চায় না তবে যারা এর উপকারিতা সম্পর্কে জানে এবং যাদের কাছে এর টেস্ট ভালো লাগে তারা এই ফলটি খুবই পছন্দ করে খায়।আজকের এই পোস্টটিতে জানতে পারবেন,আপনারা হইত অনেকেই জানেন না যে আনারস একটি ওষুধ হিসেবেও কাজ করে।আপনি চাইলে আনারস খেয়ে সর্দি,কাশি,জ্বর ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ করতে পারেন।চলুন দেড়ি না করে যেনে নেই আনারস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-
আয়ুর্বেদে আনারসের গুনাগুণ সম্পর্কে অনেক ভালো ভালো তথ্য দেওয়া রয়েছে।আপনি হইত জেনে অবাক হবেন যে কৃমির সমস্যা,জ্বর,সর্দি,কাশি,বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে এই ফল।
আনারস এমন একটি ফল যা ক্ষুধা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি রক্ত-পিত্ত মানে পিরিয়ড কালীন সময়ে সুস্থ থাকতে সহায়তা করে। আনারস জ্বর কমায়, কম প্রস্রাবের সমস্যায় উপকার করে, পেটের গ্যাস, ব্যথা, অ্যাসিডিটি এবং শারীরিক দুর্বলতা থেকে মুক্তি দেয়। পাকা আনারস ফল রক্তপাত জনিত রোগ দূর করতে সহায়তা করে।
অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি পেতে আনারসের উপকারিতা
আপনি যদি অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভুগেন তাহলে ১০ মিলিগ্রাম আনারসের জুস করে নিয়ে ভাজা তার মধ্যে ১২৫ মিলিগ্রাম হিং দিয়ে মিশিয়ে নিন এর সঙ্গে ২৫০ মিলিগ্রাম শিলা লবন এবন ২৫০ মিলিগ্রাম আদার পেস্ট বা ব্লেন্ডারে পানি দিয়ে জুস করে নিয়ে নিয়মিত সকালে এবং সন্ধ্যায় এটি পান করলে অ্যাসিডিটি এবং বদহজম থেকে মুক্তি পাবেন।পাকা আনারসের ১০০ মিলিগ্রাম জুস বানিয়ে নিয়ে ৬৫ মিলিগ্রাম সোডা (পটাশিয়াম নাইট্রেট) ২৫০ মিলিগ্রাম পিপলি এবং ২৫০ মিলিগ্রাম হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে নিন এটিকেও আপনি অ্যাসিডিটির নাশক বা বিনাশকারী হিসেবে কাজ করে।
ডায়রিয়া বন্ধ করতে আনারস সহায়তা করে
একটি ব্লেন্ডারে আনারসের পাতা নিয়ে একটি পানীয় তৈরি করে নিন। এতে বহেরা জয়ফলের গুড়ো দিন।এই পানীয়টি খেলে ডায়রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। আপনি যদি ডায়রিয়ার সমস্যায় ভুগেন তাহলে এই পানীয়টি পান করতে পারেন। খেতে একটু কষ্ট হলেও নিয়মিত এটি পান করলে ডায়রিয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
বদহজমের চিকিৎসায় আনারস উপকারী
আনারসের জুস করে খেলে পরিপাকতন্ত্রের রোগ নিরাময় করা সম্ভব। এক স্লাইস বা এক টুকরো শিলা লবণ ও কাঁচা মরিচ মিশিয়ে নিন। এটি খেলে বদহজমের সমস্যায় আরাম পাবেন। ১০০ মিলিগ্রাম পাকা আনারসের জুসের ১-২ টুকরো কিসমিস মিশিয়ে নিন। এতে ১২৫ মিলিগ্রাম শিলা লবণ মিশিয়ে খেলে বদহজমের সমস্যা ভালো হয়ে যায়। অতিরিক্ত মাত্রায় কোন কিছু খাওয়ার পর যদি পেট ফুলে যায় এবং অস্থিরতা শুরু হয়ে যায় তাহলে ৫০-১০০ আনারসের জুস খেলে উপকার পাবেন।
মূত্রনালীর সমস্যা নিরাময় করে আনারস
আপনি আনারসের জুস পান করে মূত্রনালীর যে কোন প্রকার রোগ বা সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। আপনি চাইলে এর সঙ্গে কিছুটা পরিমাণে আখের গুড় মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি প্রস্রাব সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে। আপনি যদি প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়ার সমস্যায় ভুগেন তাহলে ইচ্ছেমতো যখন খুশি তখন আনারসের জুস পান করতে থাকুন। ফলাফল পাওয়ার জন্য আপনাকে ৭ থেকে ৮ দিন প্রচুর পরিমাণে আনারসের জুস পান করতে হবে।
আরো একটি আনারসের পানীয় বানানোর রেসিপি প্রথমেই এক গ্লাস আনারসের জুস এবং সমান পরিমাণ খেজুরের টুকরো নিয়ে নিন এতে সামান্য পরিমাণে ঘিও মধু মিশিয়ে যেকোনো প্রকার কাচের পাত্রে ঢেলে রাখুন। এটি প্রতিদিন নিয়মিত ৬-১২ গ্রামের মতো সেবন করলে ঘন ঘন প্রস্রাবের রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া যায়।
ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে আনারসের উপকারিতা
আপনার শরীরের যেকোনো অংশে ব্যথা হলে আনারস আপনাকে ব্যথা নিরাময় করতে সহায়তা করবে।আনারসের জুস আপনার শরীরের যেকোনো প্রকার পুরাতন ক্ষত সারাতে সহায়তা করে।
খালি পেটে আনারস খেলে কি উপকার হয়?
যে যে সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন আনারস খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করে-ওজন নিয়ন্ত্রণে,দাঁত এবং মাড়ির সুরক্ষায়,মজবুত হাঁড় গঠনে,হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে,ব্রনের সমস্যা দূর করতে এবং বয়সের ছাপ ও বলিরেখা দূর করতে।পুষ্টিবিদদের মতে খালি পেটে সকাল আনারস খেলে দারুণ উপকার পেটে পারেন।
আনারস খাওয়ার পর পানি খেলে কি হয়?
আনারস খাওয়ার পর পানি পান করা সম্পূর্ণ ভাবে নিরাপদ এবং এটি আপনার স্বাস্থ্যের উপর কোন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না।
এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন