নাম শুনলেই বোঝা যায় ড্রাগন ফল দেখতে অনেকটা ড্রাগন এর মত। এটি হাইলোসেরিয়াস নামক একটি ক্লাইন্বিং ক্যাকটাসে জন্ম নেয়। যেটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। এই ফলটির বাহিরের আবরণ লাল,গোলাপি অথবা হলুদ রঙের হয়ে থাকে।
তবে বাংলাদেশ এবং ভারতে সবচাইতে বেশি মাত্রায় লাল রঙের ড্রাগন ফল জন্ম নেয়। আজকের এই আর্টিকেলটিতে আপনি জানতে পারবেন ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক-শরীর যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি পায় তা নিশ্চিত করার জন্য আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের ফল এবং শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এই ফল গুলির মধ্যে একটি হলো ড্রাগন ফল। এটি একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল যা সাদা এবং লাল মাংস যুক্ত নানান ধরনের জাতের হয়ে থাকে। ড্রাগন ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান।
যাইহোক, ফলের ধরন এবং পরিপক্কতার উপর নির্ভর করে পুষ্টির মান পরিবর্তিত হতে পারে।
লাল মাংস যুক্ত ড্রাগন ফলঃ প্রতি ১০০ গ্রাম লাল ড্রাগন ফল এর মধ্যে রয়েছে ৫০-৬০ গ্রাম ক্যালরি,৯-১৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট,১-২ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার,৮-১২ গ্রাম চিনি এবং ১ গ্রামের চেয়েও অল্প পরিমাণে চর্বি বা ফ্যাট।
সাদা মাংস যুক্ত ড্রাগন ফলঃ প্রতি ১০০ গ্রাম সাদা ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রায় ৬০ গ্রামের মতো ক্যালরি, ৯-১৪ গ্রাম কার্বনেট,৮-১২ গ্রাম চিনি,১-২ গ্রাম ফাইবার,১-২ গ্রাম প্রোটিন এবং গ্রাম এর চেয়েও কম মাত্রায় চর্বি বা ফ্যাট রয়েছে।
ভিটামিন এবং মিনারেল
ড্রাগন ফল ভিটামিন সি। ভিটামিন বি ১ (থায়ামিন), ভিটামিন বি ২(রিবোফ্লাভিন) এবং আয়রন সহ বিভিন্ন ভিটামিন এবং মিনারেলের একটি ভালো উৎস। এতে আরো রয়েছে ভিটামিন বি ৩, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মতো নানান ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
ড্রাগন ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার মধ্যে একটি হলো বেটালাইন যা ড্রাগন ফলের রঙে অবদান রাখে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো ফ্রী রেডিক্যাল নামক ক্ষতিকারক পদার্থ দ্বারা সৃষ্টি ক্ষতি থেকে আমাদের কোষকে রক্ষা করে এবং ভালো রাখে।
ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস
ড্রাগন ফলের মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং পলিফেনল সহ বিভিন্ন ধরনের ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস,যাতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য।
এই যৌগগুলি দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায় এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতায় অবদান রাখতে পারে।
হাইড্রেশন ও ইলেকট্রোলাইটস
ড্রাগন ফলে পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম এর মত ইলেকট্রোলাইট রয়েছে যা তরল ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং পেশির সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এই ফলটিতে হাইড্রেশন ক্ষমতা থাকে এটি খেলে হাঁপানির সমস্যা কমে যায়।
প্রিবায়োটিকের সম্ভাব্য সুবিধা
ড্রাগন ফলে থাকা ফাইবার একটি প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে এবং আপনার অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এটি হজমকে সহজ করে, মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।
ড্রাগন ফলে কি উপকারিতা আছে?
ড্রাগন ফলে যেই ছোট ছোট বিচিগুলো রয়েছে তাতে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ভিটামিন বি। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে আয়রনও পাওয়া যায়। ড্রাগন ফলে থাকে ফাইবার। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা, কোলনের সমস্যা এবং পাইলস এই ধরনের সকল সমস্যা থেকে সুস্থ থাকার জন্য প্রচুর পরিমাণে ফাইবার দরকার পরে।
ড্রাগন ফল কি ওজন কমায়?
ড্রাগন ফলে ক্যালরির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম যা ওজন কমানোর সময় ক্যালরি গ্রহণ কমানোর জন্য একটি আদর্শ পছন্দ গড়ে তোলে। ড্রাগন ফলের মধ্যে রয়েছে ডায়েটারি ফাইবার যা আপনাকে পূর্ণ এবং সন্তুষ্ট বোধ করতে সহায়তা করে। এটি সামগ্রিক খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
ড্রাগন ফল খেলে প্রস্রাব লাল হয় কি?
ড্রাগন ফলের বীজ কিছু কিছু সময় না চিবিয়ে খেলে হজম হয় না। আবার ড্রাগন ফল বেশি পরিমাণে খেলে তা সহজে হজম হয় না। বিশেষ করে অতিরিক্ত পরিমাণে লাল ড্রাগন ফল খাওয়ার পর প্রস্রাবের রং লাল হয়ে যেতে পারে।
ড্রাগন ফল দিনে কতটুকু খাওয়া যায়?
বিশেষজ্ঞদের মতে দিনে মাত্র একটি ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত।
ড্রাগন ফল খেলে কি মোটা হয়?
কম মাত্রায় ক্যালরি এবং কার্বোহাইড্রেট সামগ্রীর কারণে আপনাকে সঠিক খাদ্যের সাথে ওজন কমাতে সহায়তা করতে পারে। এছাড়াও এটি ফাইবার সমৃদ্ধ আপনাকে পূর্ণ বোধ করতে এবং খাবারের সময় অতিরিক্ত খাওয়া এড়াতে সহায়তা করে।
ড্রাগন ফল কতদিনে হয়?
ড্রাগন ফলের কাছে ফুল ফোঁটার ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। একটি ড্রাগন ফলের গাছ থেকে বছরে ৫-৬ টি বা এর অধিক ফল সংগ্রহ করা যায়।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
ড্রাগন ফলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,ফ্লাভোনয়েড, ফেনলিক এসিড এবং বিটাসায়ানিন যা ফ্রি রেডিক্যাল দ্বারা শরীরের যে কোন প্রকার ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।ফ্রি রেডিক্যাল হচ্ছে এমন একটি পদার্থ যাকে ক্যান্সার এবং অকাল বার্ধক্য সৃষ্টি করে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলির মধ্যে একটি হলো ভিটামিন সি যা দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ডায়াবেটিস, আলঝেইমার, পারকিনসন্স ইত্যাদি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এটি ড্রাগন ফলের অন্যতম একটি স্বাস্থ্য উপকারিতা।
হজমশক্তি উন্নত করে
ড্রাগন ফলের মধ্যে রয়েছে অলিগোসাকারাইদের মতো প্রিবায়োটিক যা আপনার অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই প্রিবায়োটিকগুলো পরিপাকতন্ত্রের নিচের অংশে পাওয়া যায় এটি খাবার হজম করতে সহায়তা করে।অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়া সহজেই খাবার কে শোষিত করে ভেঙে ফেলতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি ভিটামিন সরবরাহ করে যা শ রক্ষা করতে সহায়তা করেরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
আমাদের শরীরে রয়েছে হিমোগ্লোবিন (Hb) যা হলো একটি আয়রন সমৃদ্ধ কোষ।এই কোষগুলি আমাদের হার্ট থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সহায়তা করে।ড্রাগন ফল হলো আয়রনের খুব বড় একটি উৎস তাই এটি হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে খুব বড় একটি ভূমিকা পালন করে।লাল মাংসযুক্ত ড্রাগন ফলগুলিতে রয়েছে বেটালাইন,যা একটি অনন্য নাইট্রোজেন যুক্ত রঙ্গক।বেটালাইন শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
ড্রাগন ফলের মধ্যে রয়েছে কালো রঙের বিজ যা ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৯ সমৃদ্ধ,যা হার্টের জন্য ভালো এবং কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি কমায়।
ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না
আমরা উপরে পড়ে জানতে পারলাম ড্রাগন ফলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দূষণ,স্ট্রেস এবং খারাপ ডায়েট ইত্যাদির বিরুদ্ধে লড়ায় করে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে না দিয়ে ত্বককে উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে কারণ ড্রাগন ফলে রয়েছে ভিটামিন সি
চুলের জন্য উপকারী
অনেক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে নিয়মিত গরুর দুধের সঙ্গে ড্রাগন ফল মিশিয়ে খেলে এটি চুলের কোন প্রকার ক্ষতি হতে দেয় না।এছাড়াও এটি আমাদের চুলকে নরম,চকচকে এবং সিল্কি করে তোলে।
হাড়কে মজবুত করে তোলে
ড্রাগন ফলে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা হাড়কে শক্তিশালী এবং মজবুত করে তোলে এবং আপনার শরীরে যদি পুরনো কোন আঘাত বা ব্যথা লেগে থাকে সেটিকে এড়াতে ড্রাগন ফল সাহায্য করে।তাই বিশেষজ্ঞরা যাদের হাড়ের রোগের ঝুঁকি রয়েছে তাদেরকে ড্রাগন ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
চোখের জন্য উপকারী
এই ড্রাগন ফলে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন যা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ।মানুষের চোখের লেন্সে জিক্সানথিন,লুটেইন এবং মেসো।জেক্সানথিন চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং চোখের যে কোন প্রকার সমস্যা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।গবেষকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে চোখের যেকোনো প্রকার রোগ প্রতিরোধ করতে মানুষের প্রতিদিন ৩-৬ মিলিগ্রাম বিটা ক্যারোটিন গ্রহণ করা উচিৎ যা ড্রাগন ফলে রয়েছে।
গর্ভাবস্থায় উপকারী
আপনি যদি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আজকীর এই আর্টিকেলটি পরিচিতদের কাছে শেয়ার করতে ভুলবেন না ধন্যবাদ।এবং হেলথ রিলেটেড বা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোন আর্টিকেল পড়তে চাইলে গুগল নিউজে ফলো করুন।
এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন